গরীবের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া ইউএনওকে অশ্রুসিক্ত বিদায়
-
প্রতিনিধি
-
আপডেট সময়:
০৬:০৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
- 60

খান বশির
ঝালকাঠির নলছিটিতে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জনাব মো. নজরুল ইসলামকে বিদায় জানাতে জড়ো হয়েছিলেন এলাকার অসংখ্য দরিদ্র, নিঃস্ব, প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র মানুষ। কারো হাতে ছিল না দামি ফুল, কারো গায়ে ছিল না জমকালো পোশাক, তবু ছিল হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, ছিল চোখের জলে বিদায় জানানোর গভীর অনুভূতি।
এই ইউএনওর কর্মজীবন যেন ছিল মানবসেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দিনের পর দিন অফিস শেষে সন্ধ্যায় ছুটে যেতেন আশ্রয়ন প্রকল্প বা কোনো হতদরিদ্র পল্লীতে। কখনো কম্বল, কখনো খাবার, যা পেয়েছেন তাই পৌঁছে দিয়েছেন রাতের গভীরেও। যাদের জন্য কাজ করেছেন, তারা কেউ ছিল ভিক্ষুক, কেউ পাগল, কেউ অন্ধ—তবে কখনো তাদের সঙ্গে রুঢ়ভাবে কথা বলেননি, বরং সব সময় রেখেছেন হাস্যোজ্জ্বল আচরণ।
আজ সেই মানুষগুলোই এলেন তাকে বিদায় জানাতে। বৃদ্ধা নারীরা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “বাবা, আমাগো থুইয়া যাইও না।” রাস্তার এক ভিক্ষুক জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন, কারণ কখনো তার ঘরের ভাতের চালও এনে দিয়েছেন এই ইউএনও। তার এমন মানবিকতার ছোঁয়া পেয়েছে হাজারো মানুষ।
তরুণদের একটি স্বেচ্ছাসেবক ব্রিগেড গড়ে উঠেছিল তার পাশে। যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে জঙ্গল কেটেছে, পুকুরের ময়লা পরিষ্কার করেছে, সত্য তুলে ধরেছে, ঝড়-জল উপেক্ষা করে ত্রাণ বিতরণে ছুটে গেছে। আজ তারাও ছিল কাঁদা চোখে, কারণ একজন মানুষ হারানো মানেই যে তারা একজন আদর্শিক পথপ্রদর্শক হারাচ্ছেন।
এই বিদায়ের আয়োজন ছিল কোনো সরকারি আনুষ্ঠানিকতা নয়, ছিল সাধারণ মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। গরীবের চোখের জলের কোনো দাম হয় না—তবুও এই চোখের জলই প্রমাণ করে, ইউএনও নজরুল ইসলাম শুধুই একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি হয়ে উঠেছেন গরীবের মনের মানুষ।